আতর ব্যবহার এর কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করি
⚈ ক্যাপ খুলেইই সরাসরি “শরীরে” মেখে ফেলা আমরা কখনো রিকমেন্ড করিনাই, করিনা, করবো না ইনশাআল্লাহ । এলকোহলিক পারফিউমের মতন শরীর থেকে হিট নিয়ে চারিপাশ ঘ্রাণোকিত করার “অতটা” বালাই নাই এলকোহলমুক্ত পারফিউমগুলোয়, এর মধ্যকার এলডিহাইড / এস্টার / কিটোনগুলো ইভাপোরেট হয় তুলনামুলক ধীরে ধীরে [ বরং ক্ষেত্রবিশেষে দাঁত কামড়ে পড়েও থাকে ]।
আরেকটু খোলাসা করি। এলকোহলিক ফুসস পারফিউমগুলো সবাই শরীরের পালস পয়েন্টে মারতে বলেন যেন তাড়াতাড়ি তাপ নিয়ে এলকো উড়ে যায় সুঘ্রাণ-অণুগুলোকে সাথে নিয়ে, যেন পরিবেশ তাড়াতাড়ি ঘ্রাণ দ্বারা আবিষ্ট হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেড় থেকে দুই ঘন্টায় অধিকাংশ সুঘ্রাণ অণু উড়ে চলে যায়। অন্যদিকে, এলকোহলমুক্ত পারফিউমে বেশ কিছু ভারী অণুর দেখা পাওয়া যায়, যারা উড়ে চলে যায়না, বসে থাকে যেই জায়গায় ইউজ করা হচ্ছে সেথায়।
… যেহেতু উড়ে যাচ্ছেনা সবাই, কিছু পরিমাণ রয়ে যাবে স্কিনে, এবং প্রায় সব উপাদান-ই হার্মলেস হলেও ” দীর্ঘমেয়াদে” শরীরের ভেতরে প্রবেশ করলে শতকরা ৫ থেকে ১০ জনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সুখকর থাকেনা আর [ যেমন, পারফিউমের বেইজ নোটের মেশকের প্রতিনিধিত্বকারী সিন্থেসাইজড উপাদানগুলোয় অনেকের ইন্টারনাল এলার্জি থাকে ] । স্কিনের পোর দিয়ে কিছুপরিমাণেও যেন সুঘ্রাণ-উপাদান না যায়, সেই জন্য পারফিউম-অয়েল সরাসরি স্কিনে মেখে বাইরে বের হয়ে যাওয়া রিকমেন্ডেড নয় (উল্লেখ্য, দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে বলা হয়েছে। দোকানে সুঘ্রাণ বেছে নেওয়ার জন্য এলে স্বল্পসময়ের জন্য হাতেই মেখে দেওয়া হয়, যেন প্রকৃত ঘ্রাণটা আপনি পেতে পারেন কেনা’র সময়) ।
⚈ তাহলে ডিরেক্ট কাপড়ে মাখি? উমমম, এটাকেও আমরা ঠিক ‘উপযুক্ত পদ্ধতি’ বলি না । আপনি কাপড়ের এক জায়গাতে অনেকখানি পারফিউম-অয়েল মেখে নিবেন, অন্য জায়গাকে রাখবেন বঞ্চিত — দেখা যাবে আপনি পাচ্ছেন সুবাস আর বাকিরা পাচ্ছে ঘামের বদবু পিওর কটন কাপড়ে আরেকটা সমস্যা দেখেছি, যদি সেটা রঙিন হয় আর একজায়গায় অনেক পারফিউম দিয়ে ফেলেন, তীব্র রোদে অই জায়গাটা কেমন যেন ঝলসে যায় , রঙ পালটে যায়।
রঙ পালটানো থেকে মনে পড়ল। সুঘ্রাণ-বোতল হাতে তুলে নিয়ে, কেউ সরাসরি কাপড়ে ডলে ফেললে, প্রায়ক্ষেত্রেই একটা পানি-পানি দাগ রয়ে যায় ( আর সাদা কাপড়ে রঙিন আতর হলে তো কথাই নাই ) । যদিও সেই পানিদাগ কিছুক্ষণ ১:১ রেশিও’র সার্ফএক্সেল+পানি দিয়ে ঘষে এরপরে ধুয়ে ফেললে চলে যায়, কিন্তু ঠিক ঐ সময়টায় একটা হজবরল লেগে যায় না?? … এই অপশনটা তাই ” শর্তসাপেক্ষে ” ব্যবহারযোগ্য ( শর্ত বলতেছি চার নাম্বারে)
⚈ ক্যাপ খুলে রোলার একহাতের তালুতে রোল করে, এরপর দুই তালু একসাথে মালিশ করে, এরপরে তালু পরনের বস্তুর পুরোটায় বুলিয়ে নেওয়া — যেটা হয়, কাপড়ে সমভাবে বন্টিত হয় ঘ্রাণ-অণু, সার্ফেস এরিয়া বেড়ে যায় অনেকখানি । ঘ্রাণ ছড়ায় দীর্ঘ সময় ধরে, কাপড়ে দাগ হওয়ার কোন চিন্তা থাকেনা, সবচে বড় কথা বুজুর্গ-রা এই পদ্ধতিকে আতর মাখার সুন্নাহ ওয়ে বলেছেন (সেই সময়ে অবশ্যই রোল অন ফ্যাসিলিটি ছিলো না, যতদূর জানা যায়, আতরের ডিব্বা থেকে হাতের তালুতে ঢেলে ফেলা হতো অরগানিক আত্তার। চাইলে কিন্তু এইটাও করতে পারেন, রোলার ম্যাকানিজম নখের চাড় দিয়ে বোতল থেকে খুলে তিন চার ফোটা সুঘ্রাণ তালুর মাঝখানের গর্তটায় ঢেলে নিতে পারেন, এরপরে দুইতালু এক করে কাপড়ে বুলিয়ে নিবেন কেবল। পারসোনালি আমি এভাবে আতর মাখি )।
এই পদ্ধতির একটা দুর্বল দিক আছে, হাতের দুই তালু ঘষার জন্য টপনোট বা পারফিউমের প্রথম ৫ থেকে ১০ মিনিট যেই চরম উচ্ছ্বাসী ঘ্রাণ আসার কথা, সেটার কিছুঅংশ হাত থেকে তাপ নিয়ে উড়ে যাবে, আপনি পুরো ঘ্রাণটা পাবেন না। ইয়ে মানে, ১০ মিনিটের উচ্ছলতাকে ‘খানিকটা’ কুরবান করে যদি লঞ্জিভিটি বাড়ানো যায় বেশ অনেকক্ষণ, তাহলে সেটাই কি ভালো না?
⚈ কাপড়ে যদি নিতান্ত মাখতেই চান, তাহলে কাপড়ের বুকের দিকে যেই শক্ত জায়গাটায় বোতাম লাগানো থাকে ( বোতামের ঢাকনার কথা বলছি না ), সেই জায়গাটুকুতে আচ্ছা করে লাগাতে পারেন। যদি পরনের বস্তু কালো হয় (টরে কাপড় হলে আরো ভালো) দুইকাঁধের কাপড়ে ডলে নিতে পারেন ।
⚈ কাপড় ধুয়ে চিপড়ানোর পরে শুকানোর ঠিক আগ মুহূর্তে পুরো কাপড়ে বুলিয়ে নিতে পারেন সুবাস, দেখবেন কাপড় শুকানোর পরে ধিকিধিকি একটা ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে চারিদিকে। আর, যদি আপনার সেন্ডুগেঞ্জি পরার অভ্যাস থাকে, তাহলে এই ট্রিক্স-টা জীবনে একবার হলেও প্রয়োগ করিয়েন প্লিজ : পাঞ্জাবি / শার্ট পরার আগে উল্টিয়ে, কাপড়ের উল্টোদিকে আচ্ছা করে মেখে নিলেন হাতের তালুস্থ পারফিউম-অয়েল তথা আতর। এটা শুধু নিজের জন্য। যেই পারফিউম-ই হোক না কেন, গ্যারান্টি দেব, মোটামুটি দুইঘন্টার জন্য ঘ্রাণ-সমুদ্রে হাবুডুবু খাবেন!